তাওহীদ পাবলিকেশন

বুখারী শরীফ

হাদিস সমূহ
বর্ণনাকারী: সবগুলো
হাদিস সংখ্যা: ৩৩৪৬
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। | বর্ণনাকারী: হুমাইদ ইবনু আবদুর রাহমান (রহ.)
হাদিস নং (৭১): হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মু‘আবিয়াহ (রাযি.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ‘ইল্ম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহ্ই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর কায়িম থাকবে, বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলমের ব্যাপারে সঠিক অনুধাবন | বর্ণনাকারী: মুজাহিদ (রহ.)
হাদিস নং (৭২): মুজাহিদ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সফরে মদিনা পর্যন্ত ইবনু ‘উমার (রাযি.)-এর সাথে ছিলাম। এ সময় তাঁকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একটি মাত্র হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ছিলাম। তখন তাঁর নিকট খেজুর গাছের (অভ্যন্তরের কোমল অংশ) মাথি আনা হল। অতঃপর তিনি বললেনঃ বৃক্ষরাজির মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার দৃষ্টান্ত মুসলিমের ন্যায়। তখন আমি বলতে চাইলাম যে, তা হল খেজুর বৃক্ষ, কিন্তু আমি লোকদের মাঝে বয়সে সবচাইতে ছোট ছিলাম। তাই নীরব থাকলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘সেটা হলো খেজুর বৃক্ষ।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম ও হিকমাহ এর ক্ষেত্রে সমতুল্য হবার উৎসাহ | বর্ণনাকারী: ক্বায়স বিন হাযিম (রহ.)
হাদিস নং (৭৩): ক্বায়স বিন হাযিম (রহ.) বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাযি.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবল দু’টি বিষয়ে ইর্ষা করা বৈধ; (১) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন; (২) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ তা’আলা প্রজ্ঞা দান করেছেন, অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: সমুদ্রে খাযির (আঃ) এর নিকট মূসা (আঃ) এর গমন | বর্ণনাকারী: ইবনু ’আব্বাস (রাযি.)
হাদিস নং (৭৪): ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি এবং হুর ইবনু কায়স ইবনু হিসন আল-ফাযারীর মধ্যে মূসা (আ)-এর সম্পর্কে বাদানুবাদ হলো। ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) বললেন, তিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাদের পাশ দিয়ে উবাঈ ইব্ন কা’ব (রাযি.) যাচ্ছিলেন। ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেনঃ আমি ও আমার এ ভাই মূসা (আ)-এর সেই সহচর সম্পর্কে বাদানুবাদ করছি যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা (আ) আল্লাহর নিকট পথের সন্ধান চেয়েছিলেন- আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, একদা মূসা (আ) বনী ইসরাঈলের কোন এক মাজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তখন তাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ’আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে মনে করেন কি?’ মূসা (আ) বললেন, ’না।’ তখন আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-এর নিকট ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ ’হ্যাঁ, আমার বান্দা খিযর।’ অতঃপর মূসা (আ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পথের সন্ধান চাইলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা মাছকে তার জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হল, যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে যাবে। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি তাঁর সাথে মিলিত হবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছের নিদর্শন অনুসরণ করতে লাগলেন। মূসা (আ)-কে তাঁর সঙ্গী যুবক (ইউশা ইবনু নূন) বললেন, (কুরআন মজীদের ভাষায়ঃ) আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন পাথরের নিকট বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মূসা বললেন, আমরা তো সেটিরই সন্ধান করছিলাম। অতঃপর তারা নিজেদের পদ চিহ্ন অনুসরণ করে ফিরে চলল। (সূরাহ্ কাহ্ফ ১৮/৬৩-৬৪) তাঁরা খিযরকে পেলেন। তাদের ঘটনা সেটাই, যা আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কিতাবে বিবৃত করেছেন।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর উক্তি “হে আল্লাহ! আপনি তাকে কিতাব শিক্ষা দিন” | বর্ণনাকারী: ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.)
হাদিস নং (৭৫): ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে জাপটে ধরে বললেন, ‘হে আল্লাহ্! আপনি তাকে কিতাবের (কুরআন) জ্ঞান দান করুন।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: বালকদের কোন বয়সের কথা শোনা গ্রহণযোগ্য। | বর্ণনাকারী: আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.)
হাদিস নং (৭৬): ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি সাবালক হবার নিকটবর্তী বয়সে একদা একটি গাধীর উপর আরোহিত অবস্থায় এলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মিনায় সালাত আদায় করছিলেন তার সামনে কোন দেয়াল না রেখেই। তখন আমি কোন এক কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম এবং গাধীটিকে বিচরণের জন্য ছেড়ে দিলাম। আমি কাতারের ভেতর ঢুকে পড়লাম কিন্তু এতে কেউ আমাকে নিষেধ করেননি।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: বালকদের কোন বয়সের কথা শোনা গ্রহণযোগ্য। | বর্ণনাকারী: মাহমূদ ইবনুর-রাবী‘ (রাযি.)
হাদিস নং (৭৭): মাহমূদ ইবনুর-রাবী‘ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বালতি থেকে পানি নিয়ে আমার মুখমন্ডলের উপর কুলি করে দিয়েছিলেন, তখন আমি ছিলাম পাঁচ বছরের বালক।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: জ্ঞান অন্বেষণের উদ্দেশ্যে বের হওয়া | বর্ণনাকারী: ইবনু ’আব্বাস (রাযি.)
হাদিস নং (৭৮): ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি এবং হুর ইবনু কায়স ইবনু হিসন আল-ফাযারীর মধ্যে মূসা (আ)-এর সম্পর্কে বাদানুবাদ হলো। ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) বললেন, তিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাদের পাশ দিয়ে উবাঈ ইব্ন কা’ব (রাযি.) যাচ্ছিলেন। ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেনঃ আমি ও আমার এ ভাই মূসা (আ)-এর সেই সহচর সম্পর্কে বাদানুবাদ করছি যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা (আ) আল্লাহর নিকট পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, একদা মূসা (আ) বনী ইসরাঈলের কোন এক মাজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তখন তাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ’আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে মনে করেন কি?’ মূসা (আ) বললেন, ’না।’ তখন আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-এর নিকট ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ ’হ্যাঁ, আমার বান্দা খিযর।’ অতঃপর মূসা (আ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য পথের সন্ধান চাইলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা মাছকে তার জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হল, যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে যাবে। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি তাঁর সাথে মিলিত হবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছের নিদর্শন অনুসরণ করতে লাগলেন। মূসা (আ)-কে তাঁর সঙ্গী যুবক (ইউশা ইবনু নূন) বললেন, (কুরআন মজীদের ভাষায়ঃ) আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন পাথরের নিকট বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মূসা বললেন, আমরা তো সেটিরই সন্ধান করছিলাম। অতঃপর তারা নিজেদের পদ চিহ্ন অনুসরণ করে ফিরে চলল। (সূরাহ্ কাহাফ ১৮/৬৩-৬৪) তাঁরা খিযরকে পেলেন। এ হল তাদের দু’জনের ঘটনা, যা আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কিতাবে বিবৃত করেছেন।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম অন্বেষণকানী ও ইলম প্রদানকারীর ফযীলত | বর্ণনাকারী: আবূ মূসা (রাযি.)
হাদিস নং (৭৯): আবূ মূসা (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যে হিদায়াত ও ‘ইল্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ তা‘আলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে) পান করায় এবং তা দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জমি রয়েছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন ঘাসপাতা উৎপাদন করে। এই হল সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিখায়। আর সে ব্যক্তিরও দৃষ্টান্ত- যে সে দিকে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহর যে হিদায়াত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণও করে না। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (বুখারী) (রহ.) বলেনঃ ইসহাক (রহ.) আবূ উসামাহ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ তিনি قلت এর স্থলে قَيَّلَتْ (আটকিয়ে রাখে) ব্যবহার করেছেন। قاع হল এমন ভূমি যার উপর পানি জমে থাকে। আর الصَّفْصَفُ হল সমতল ভূমি।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলমের বিলুপ্তি ও মূর্খতার প্রসার | বর্ণনাকারী: আনাস (রাযি.)
হাদিস নং (৮০): আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের কিছু ’আলামত হলঃ ’ইল্ম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতা প্রসারতা লাভ করবে, মদপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং যেনা ব্যভিচার বিস্তার লাভ করবে।