তাওহীদ পাবলিকেশন

বুখারী শরীফ

হাদিস সমূহ
বর্ণনাকারী: সবগুলো
হাদিস সংখ্যা: ৩৩৪৬
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: মুহাদ্দিসের উক্তি: হাদ্দাসানা, আখবারানা ও আম্বাআনা। | বর্ণনাকারী: ইবনু উমার (রাযি.)
হাদিস নং (৬১): ইবনু ’উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেনঃ গাছগাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উদাহরণ, তোমরা আমাকে অবগত কর ’সেটি কী গাছ?’ তখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-গাছালির নাম ধারণা করতে লাগল। ’আবদুল্লাহ (রাযি.) বলেন, ’আমার ধারণা হল, সেটা হবে খেজুর গাছ।’ কিন্তু আমি (ছোট থাকার কারণে) তা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। অতঃপর সাহাবীগণ (রাযি.) বললেন, ’হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের বলে দিন সেটি কী গাছ?’ তিনি বললেনঃ ’তা হচ্ছে খেজুর গাছ।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: শিষ্যদের জ্ঞান যাচাইয়ের উদ্দেশে শিক্ষকের কোন বিষয় উত্থাপন করা। | বর্ণনাকারী: ইবনু উমার (রাযি.)
হাদিস নং (৬২): ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেনঃ ‘গাছ-গাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে যার পাতা ঝরে পড়ে না। আর তা মুসলিমের উদাহরণ। তোমরা আমাকে বল, সেটি কী গাছ?’ রাবী বলেন, তখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-গাছালির নাম ধারণা করতে লাগল। ‘আবদুল্লাহ (রাযি.) বলেন, ‘আমার ধারণা হল, সেটা হবে খেজুর গাছ।’ কিন্তু আমি (ছোট থাকার কারণে) তা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। অতঃপর সাহাবীগণ (রাযি.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের বলে দিন সেটি কী গাছ?’ তিনি বললেনঃ ‘তা হচ্ছে খেজুর গাছ।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: হাদীস অধ্যয়ন ও মুহাদ্দিসের নিকট তা বর্ণনা করা। | বর্ণনাকারী: আনাস ইবনু মালিক (রা.)
হাদিস নং (৬৩): আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা মসজিদে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় প্রবেশ করল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে (বেঁধে) দিল। অতঃপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, ’তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ ব্যক্তি?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের সামনেই হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। আমরা বললাম, ’এই হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ফর্সা ব্যক্তিটিই হলেন তিনি।’ অতঃপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, ’হে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র!’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ’আমি তোমার উত্তর দিচ্ছি? লোকটি বলল, ’আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হব, এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন না।’ ’তিনি বললেন, ’তোমার যা মনে চায় জিজ্ঞেস কর।’ সে বলল, ’আমি আপনাকে স্বীয় প্রতিপালক এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতিপালকের শপথ দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আল্লাহ্ কি আপনাকে সমগ্র মানবকুলের প্রতি রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেনঃ ’আল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ’আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের আদেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেনঃ ’আল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ’আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমাযান) সিয়াম পালনের আদেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেনঃ ’আল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ সে বলল, ’আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে আদেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের থেকে এসব সদাক্বাহ (যাকাত) আদায় করে দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করে দিতে?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’আল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ।’ অতঃপর লোকটি বলল, ’আমি বিশ্বাস স্থাপন করলাম আপনি যা (যে শরী’আত) এনেছেন তার উপর। আর আমি আমার গোত্রের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে প্রতিনিধি, আমার নাম যিমাম ইবনু সা’লাবা, বানী সা’আদ ইবনু বক্র গোত্রের একজন।’ মূসা ও ’আলী ইবনু আবদুল হামীদ (রহ.)....আনাস (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এরূপ বর্ণনা করেছেন।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: শায়খ কর্তৃক ছাত্রকে হাদীসের কিতাব প্রদান এবং ‘আলিম কর্তৃক ‘ইলমের কথা লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ। | বর্ণনাকারী: আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাযি.)
হাদিস নং (৬৪): আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে তাঁর চিঠি দিয়ে পাঠালেন এবং তাকে বাহরাইনের গভর্নর-এর নিকট তা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর বাহরাইনের গভর্নর তা কিসরা (পারস্য সম্রাট)-এর নিকট দিলেন। পত্রটি পড়ার পর সে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। [বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন] আমার ধারণা ইবনু মুসায়্যাব (রহ.) বলেছেন, (এ ঘটনার খবর পেয়ে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বদদু’আ করেন যে, তাদেরকেও যেন সম্পূর্ণরূপে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: শায়খ কর্তৃক ছাত্রকে হাদীসের কিতাব প্রদান এবং ‘আলিম কর্তৃক ‘ইলমের কথা লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ। | বর্ণনাকারী: আনাস ইবন মালিক (রা.)
হাদিস নং (৬৫): আনাস ইবন মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানা পত্র লিখলেন অথবা একখানা পত্র লিখতে ইচ্ছা পোষণ করলেন। তখন তাঁকে বলা হল, তারা (রোমবাসী ও অনারবরা) সীলমোহর ব্যতীত কোন পত্র পাঠ করেনা। অতঃপর তিনি রূপার একটি আংটি (মোহর) তৈরি করিয়ে নিলেন যাতে খোদিত ছিল (মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ)। আমি যেন তাঁর হাতে সে আংটির শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি [শু‘বা (রহ.) বলেন] আমি কাতাদাহ (রহ.) কে বললাম, কে বলেছে যে, তার নকশা (মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) ছিল? তিনি বললেন, ‘আনাস (রাযি.)।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: মজলিসের শেষ প্রান্তে বসা এবং মজলিসের অভ্যন্তরে ফাঁক দেখে সেখানে বসা। | বর্ণনাকারী: আবূ ওয়াক্বিদ আল-লায়সী (রাযি.)
হাদিস নং (৬৬): আবূ ওয়াক্বিদ আল-লায়সী (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদে বসে ছিলেন; তাঁর সাথে আরও লোকজন ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনজন লোক আসলো। তন্মধ্যে দু’জন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে এগিয়ে আসলেন এবং একজন চলে গেলেন। আবূ ওয়াকিদ (রাযি.) বলেন, তাঁরা দু’জন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তাঁদের একজন মাজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়লেন এবং অপরজন তাদের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে গেল। যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবসর হলেন (সাহাবীদের লক্ষ্য করে) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলব না? তাদের একজন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করল, আল্লাহ্ তাকে আশ্রয় দিলেন। অন্যজন লজ্জাবোধ করল, তাই আল্লাহ্ও তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ করলেন। আর অপরজন (মাজলিসে হাযির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তাই আল্লাহ্ও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী “যাদের নিকট হাদীস পৌঁছানো হয় তাঁদের মধ্যে অনেকে এমন রয়েছে, যে শ্রোতা অপেক্ষা অধিক আয়ত্ত রাখতে পারে। | বর্ণনাকারী: আবূ বকরাহ্ (রাযি.)
হাদিস নং (৬৭): আবূ বকরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ করে বলেন, (মিনায়) তিনি তাঁর উটের উপর উপবেশন করলেন। জনৈক ব্যক্তি তাঁর উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তিনি বললেনঃ ‘এটা কোন্ দিন?’ আমরা চুপ করে রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এ দিনটির আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ ‘‘এটা কি কুরবানীর দিন নয়?’ আমরা বললাম, ‘জি হ্যাঁ।’ তিনি জিজ্ঞেসঃ ‘এটা কোন্ মাস?’ আমরা নীরব রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এর আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ ‘এটা কি যিলহাজ্জ মাস নয়?’ আমরা বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেনঃ ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন আজকের তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর মর্যাদা সম্পন্ন। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট এসব কথা পৌঁছে দেয়। কারণ উপস্থিত ব্যক্তি সম্ভবত এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছাবে, যে এ বাণীকে তার চেয়ে অধিক আয়ত্তে রাখতে পারবে।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: লোকজন যাতে বিরক্ত না হয়ে পড়ে সে জন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহতে ও ইলম শিক্ষাদানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। | বর্ণনাকারী: ইবনু মাস’ঊদ (রাযি.)
হাদিস নং (৬৮): ইবনু মাস’ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট দিনে নাসীহাত করতেন, আমরা যাতে বিরক্ত বোধ না করি।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: লোকজন যাতে বিরক্ত না হয়ে পড়ে সে জন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহতে ও ইলম শিক্ষাদানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। | বর্ণনাকারী: আনাস (রাযি.)
হাদিস নং (৬৯): আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম শিক্ষার্থীদের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা | বর্ণনাকারী: আবূ ওয়াইল (রাযি.)
হাদিস নং (৭০): আবূ ওয়াইল (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের নাসীহাত করতেন। তাঁকে একজন বলল, ‘হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমার ইচ্ছা জাগে, যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নাসীহাত করেন। তিনি বললেনঃ এ কাজ থেকে আমাকে যা বাধা দেয় তা হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নাসীহাত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি খেয়াল রাখি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্লান্তির আশংকায় আমাদের প্রতি যেমন লক্ষ্য রাখতেন।