তাওহীদ পাবলিকেশন

বুখারী শরীফ

হাদিস সমূহ
বর্ণনাকারী: সবগুলো
হাদিস সংখ্যা: ৩৩৫৫
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম লিপিবদ্ধ করা। | বর্ণনাকারী: আবূ জুহাইফাহ (রাযি.)
হাদিস নং (১১১): আবূ জুহাইফাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ‘আলী (রাযি.)-কে বললাম, আপনাদের নিকট কি কিছু লিপিবদ্ধ আছে? তিনি বললেনঃ ‘না, শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছে, আর একজন মুসলিমকে যে জ্ঞান দান করা হয় সেই বুদ্ধি ও বিবেক। এছাড়া কিছু এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।’ তিনি [আবূ জুহাইফাহ (রাযি.)] বলেন, আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ‘ক্ষতিপূরণ ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, ‘মুসলিমকে কাফির হত্যার বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম লিপিবদ্ধ করা। | বর্ণনাকারী: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
হাদিস নং (১১২): আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, মক্কা্ বিজয়কালে খুযা’আহ গোত্র লায়স গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করল। এ হত্যা ছিল তাদের এক নিহত ব্যক্তির প্রতিশোধ, যাকে ইতোপূর্বে লায়স গোত্রের লোক হত্যা করেছিল। তারপর এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছল। তিনি তাঁর উটের উপর আরোহণ করে ভাষণ দিলেন, তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা মক্কা্ হতে ’হত্যা’-কে কিংবা ’হাতী’-কে রোধ করেছেন। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’হত্যা’ বলেছেন না ’হাতী’ বলেছেন এ ব্যাপারে বর্ণনাকারী আবূ নু’আয়ম সন্দেহ পোষণ করেন। অন্যরা শুধু ’হাতী’ শব্দ উল্লেখ করেছেন। অবশ্য মক্কাবাসীদের উপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মু’মিনগণকে (যুদ্ধের মাধ্যমে) বিজয়ী করা হয়েছে। জেনে রাখ, আমার পূর্বে কারো জন্য মক্কাকে হালাল করা হয়নি এবং আমার পরেও হালাল হবে না। জেনে রাখ, তাও আমার জন্য দিনের কিছু সময়ের জন্য বৈধ করা হয়েছিল। আরো জেনে রাখ যে, আমার এই কথা বলার মুহূর্তে আবার তা অবৈধ হয়ে গেছে। সেখানকার কোন কাঁটা কিংবা গাছ কাটা যাবে না এবং সেখানে পড়ে থাকা কোন বস্তু কুড়িয়ে নেয়া যাবে না। তবে ঘোষণা দেয়ার জন্য তা নিতে পারবে। আর কেউ নিহত হলে তার আপনজনদের জন্য দু’টি ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণের এখতিয়ার আছে। হয় তার ’রক্তপণ নিবে নয় ’কিসাসের ফায়সালা’ গ্রহণ করবে। অতঃপর ইয়ামানবাসী জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (এ কথাগুলো) আমাকে লিখে দিন। তিনি (সাহাবীদের) বললেনঃ তোমরা অমুকের পিতাকে লিখে দাও। তারপর জনৈক কুরায়শ [’আব্বাস (রাযি.)] বললেন, ’হে আল্লাহর রাসূল! গাছপালা কাটার নিষেধাজ্ঞা হতে ইযখির (এক প্রকার লম্বা ঘাষ) বাদ দিন। কারণ তা আমরা আমাদের গৃহে ও কবরে কাজে লাগাই।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’ইযখির ব্যতীত, ইযখির ব্যতীত।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম লিপিবদ্ধ করা। | বর্ণনাকারী: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
হাদিস নং (১১৩): আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাযি.) ব্যতীত আর কারো নিকট আমার চেয়ে অধিক হাদীস নেই। কারণ তিনি লিখতেন, আর আমি লিখতাম না। মা‘মার (রহ.) হাম্মাম (রহ.) সূত্রে আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম লিপিবদ্ধ করা। | বর্ণনাকারী: ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.)
হাদিস নং (১১৪): ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অসুখ যখন বৃদ্ধি পেল তখন তিনি বললেনঃ ‘আমার নিকট লেখার জিনিস নিয়ে এস, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরে তোমরা আর পথভ্রষ্ট হবে না।’ ‘উমার (রাযি.) বললেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের নিকট তো আল্লাহর কিতাব আছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ এতে সাহাবীগণের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিল এবং শোরগোল বেড়ে গেল। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার নিকট ঝগড়া-বিবাদ করা অনুচিত।’ এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলেন যে, ‘হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: রাতে ‘ইল্‌ম শিক্ষাদান এবং ওয়ায-নাসীহাত করা। | বর্ণনাকারী: উম্মু সালামাহ (রাযি.)
হাদিস নং (১১৫): উম্মু সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রা হতে জেগে বলেনঃ সুবহানাল্লাহ্! এ রাতে কতই না বিপদাপদ নেমে আসছে এবং কতই না ভান্ডার উন্মুক্ত করা হচ্ছে! অন্য সব ঘরের নারীদেরকেও জানিয়ে দাও, ‘বহু মহিলা যারা দুনিয়ায় পোশাক পরিহিতা, তারা অখিরাতে হবে বিবস্ত্র।’
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: রাতে ইল্‌মের আলোচনা করা। | বর্ণনাকারী: আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.)
হাদিস নং (১১৬): আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জান? বর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছে, একশ বছরের মাথায় তাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: রাতে ইল্‌মের আলোচনা করা। | বর্ণনাকারী: ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.)
হাদিস নং (১১৭): ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী মায়মূনা বিন্ত হারিস (রাযি.)-এর ঘরে এক রাতে ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে (পালার) রাতে সেখানে ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত আদায় করে তাঁর ঘরে চলে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর উঠে বললেনঃ বালকটি কি ঘুমিয়ে পড়েছে? বা এরূপ কোন কথা বললেন। অতঃপর (সালাতে) দাঁড়িয়ে গেলেন, আমিও তাঁর বাঁ দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডান দিকে সরিয়ে এনে পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। পরে আরো দু’ রাক‘আত আদায় করলেন। অতঃপর শুয়ে পড়লেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পেলাম। অতঃপর উঠে তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম আয়ত্ত করা। | বর্ণনাকারী: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
হাদিস নং (১১৮): আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকে বলে, আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) অধিক হাদীস বর্ণনা করে। (জেনে রাখ,) কিতাবে দু’টি আয়াত যদি না থাকত, তবে আমি একটি হাদীসও পেশ করতাম না। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ ‘‘আমি সেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা বিস্তারিত বর্ণনার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ্ তাদেরকে অভিশাপ দেন এবং অভিশাপকারীগণও তাদেরকে অভিশাপ দেয় কিন্তু যারা তওবা করে এবং আত্মসংশোধন করে এবং প্রকাশ করে দেয় যে, আমি তাদের (ক্ষমার) জন্য ফিরে আসি, আর আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/১৫৯-১৬০)। (প্রকৃত ঘটনা এই যে,) আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে কেনাবেচায় এবং আমার আনসার ভাইয়েরা জমা-জমির কাজে মশগুল থাকত। আর আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) (অভুক্ত থেকে) তুষ্ট থেকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে লেগে থাকত। তাই তারা যখন উপস্থিত থাকত না, তখন সে উপস্থিত থাকত এবং তারা যা আয়ত্ত করত না সে তা আয়ত্ত রাখত।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম আয়ত্ত করা। | বর্ণনাকারী: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
হাদিস নং (১১৯): আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট হতে অনেক হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি বললেনঃ তোমার চাদর মেলে ধর। আমি তা মেলে ধরলাম। তিনি দু’হাত খাবল করে তাতে কিছু ঢেলে দেয়ার মত করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগাও। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। অতঃপর আমি আর কিছুই ভুলে যাইনি। ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহ.).....ইবনু আবূ ফুদায়ক (রহ.) সূত্রে একইরূপ হাদীস বর্ণনা করেন এবং তাতে বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে সে চাদরের মধ্যে (কিছু) দিলেন।
অধ্যায়: আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) | উপ-অধ্যায়: ইলম আয়ত্ত করা। | বর্ণনাকারী: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
হাদিস নং (১২০): আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু’পাত্র ‘ইলম আয়ত্ত করে রেখেছিলাম। তার একটি পাত্র আমি বিতরণ করে দিয়েছি। আর অপরটি এমন যে, প্রকাশ করলে আমার কণ্ঠনালী কেটে দেয়া হবে। ‘আবদুল্লাহ্ (রহ.) বলেন, হাদীসে উল্লিখিত الْبُلْعُومُ শব্দের অর্থ খাদ্যনালী।